তখন থেকেই আমি তাকিয়ে আছি ঋষিজার দিকে,
কেমন ধীর, স্থির চলন বলন তার।
অতি মৃদুস্বরে যখন সে বাবা বলে ডাকে,
আমার হৃদয়ের গহীনে টের পাই শীতলতার আমেজ!
ভাবি আমি, ঋষিজা নামের মানে যদি হয় ‘ঋষিকন্যা’,
আমিই তাহলে সেই ঋষি!
আগেতো কোনদিন ভাবিনি এমন করে নামের কি মহিমা,
যিনি ঋষিজা নামটি রেখেছিলেন, বাংলা ভাষার প্রতি
তাহার মমতাকেই ধরে নিয়েছিলাম এমন নামকরনের কারন হিসেবে।
আমার চেতনায় ছিলোনা নামের কি গুরুত্ব, নাম তো নাম,
মনে পড়ে, কতশিশুর নাম রাখা হয়েছিল ‘মিলেনিয়াম’
যারা ভুমিষ্ঠ হয়েছিল একুশ শতকের প্রথম দিবসে
অথবা প্রথম মাসের যে কোন এক ক্ষনে!
আহ! একুশ শতকের কথা ভাবার সাথে সাথেই
‘একুশ’ শব্দটি কেমন এক ঝংকার তুললো হৃদয় বীণার তারে!
হ্যাঁ, এবার অনেক বেশী স্বচ্ছ হয়েছে ‘ঋষিজা’ নামের উৎস।
বাংলা ভাষার জন্য প্রান উৎসর্গ করেছিলেন
রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার, সালাম নামের তরুনের দল
সেও আজ থেকে ষাট বছর আগে!
ষাট বছর পরেও দেখি প্রায় প্রতি রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে চলেছে
এক নারী, তাঁর কিশোরী বালিকাটিকে বাংলা শেখানোর উৎসাহে!
দোষ আমার! উচ্চশিক্ষার মানসে চলে এসেছিলাম দেশ ছেড়ে মার্কিন মুলুকে।
আমার উপর নির্ভর করেই ওরাও এসেছিল, মা ও তিন মেয়ে।
কাজের চাপে দিশেহারা আমি, খেয়াল করার অবসর নেই
মায়েরা আমার মাতৃভাষা ভুলেই গিয়েছে কিনা!
আসলে খেয়াল করার প্রয়োজনই বোধ করিনি
সারাক্ষন তো ‘বাবা’ ডাক শুনি, ‘মা’ ডাক শুনি
কই ‘ড্যাডি’ বা ‘মাম্মি’ তো এখনও শুনিনা
তাহলে আমিই বা কেন অযথা উতলা হতে যাব
মেয়েরা বাংলা ভুলে গেছে ভেবে!
আমি প্রতিদিন খাবারের থালাতে দেখি গরম ধোঁয়া উঠা ভাত
সাথে ডাল, মাছ আর একটা সব্জী।
আমার পাশে বসেই ‘ঋষিজা’ হাত দিয়েই ভাত মেখে
কেমন সুন্দর করে খেয়ে যায়!
রুই, ইলিশ, পাবদা, কই মাছ ভালো চেনে, আরও
জানে পিঠা পায়েসের কথা।
মাকে ডেকে বলে, ‘মা, পাটিসাপটা পিঠা বানাও, ক্ষীর দেবে বেশী করে’
তার মায়ের দেখি মুখ উপচে পড়ে খুশীর ঝলক!
তা পড়ারই কথা।
‘ঋষিজা’কে নিয়ে এসেছিলাম যখন সে মাত্র দুই বছরের শিশু,
ভাল করে কথাই ফুটেনি মুখে।
মনে পড়ে যায়, এসে উঠেছিলাম বাঙ্গালী বিবর্জিত এক শহরে।
ঋষিজা পড়ে গিয়েছিল মহাবিপদে
কি হবে তার মুখের ভাষা, ইংরেজী নাকি বাংলা!
ছয় নম্বর বিপদ সঙ্কেত টের পেয়েছিলাম যখন
ঋষিজা ‘বাংলিশ’ এ কথা বলা শুরু করেছিল।
আমার মুখে অসহায়তা দেখে মেয়ের মা বলেছিল,
“মেয়ের নাম রেখেছি ঋষিজা, এতো আর বিনা কারনে রাখিনি
নামের প্রভাবেই মেয়ে আমার সকল বাধা কাটিয়ে উঠবে”।
তা কেটেছে, ঋষিজা এখন আর ‘বাংলিশ’ এ কথা বলেনা
নিরেট ইংলিশেও কথা বলেনা।
যখন যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি করেই ও কথার আদান-প্রদান করে।
তার বাংলা উচ্চারণ শুনলে পরে দেশের ‘বাংলিশ’ ছেলেমেয়ের বাবা মায়েরাও
থমকাবে, নিজের ছেলেমেয়েদের প্রতি, নিজের ভাষার প্রতি তাদের অবজ্ঞার জন্য।
তারা এখানেও থমকায়, যখন ঋষিজা ‘একুশের অনুষ্ঠানে’
শুদ্ধ বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করে যায়।
গত তিন বছর আগেই মাত্র নয় বছর বয়সে
ঋষিজা আবৃত্তি করেছিল, ‘কাজলা দিদি’
হলভর্তি মানুষের চোখ জলে ছলছল করে উঠেছিল।
তারা ঋষিজাকে বুকে চেপে ধরে আহ্লাদে আহ্লাদে ভরিয়ে দিয়েছিল।
গেলো বছর ‘একুশের’ অনুষ্ঠানেই আবৃত্তি করলো, জসীমুদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’।
সবাই এখন ধরেই নিয়েছে, এ বছরের ‘একুশে’তে
ঋষিজা আরও বড় কোন কবিতা আবৃত্তি করবে।
হয়তো সত্যিই ঋষিজা এবছর আরও বড় কোন চমক দেখাবে
সবকিছু নির্ভর করে ঋষিজার বাংলাপ্রেমী মায়ের উপর।
এই নারীকে দেখলেই বাংলাকে দেখা হয়ে যায়,
তার সাথে কথা বললেই বাংলাকে ভালো না বেসে উপায় থাকেনা।
‘একুশে পদক’ পায় শুধুমাত্র মুখচেনা কীর্তিমানেরা
যখন ঋষিজার মায়েরা থেকে যায় পর্দার অন্তরালে!
সে কোন পদকের অপেক্ষায় থাকেনা, যেমন
থাকেনি ষাট বছর আগের সেই দামাল তরুনেরা।
এরা জন্মেছেই সবার হয়ে মাতৃভূমির প্রতি ঋণশোধের দায় নিয়ে।
১৯ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৬৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪